স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলের বাজারেও বাড়তি মূল্যে পেঁয়াজের বিক্রি চলছে। চড়া দামে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। তবে প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিম পেঁয়াজের আমদানি ও বিক্রয় মূল্যের তেমন কোন তারতম্য পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে। বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ঢাকার ব্যবসায়ীরা ফরিদপুর থেকে বেশিরভাগ পেঁয়াজ কিনে ফেলায় সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে রাতারাতি বরিশালের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ধরন ও আমদানি দর ভেদে সোমবার দুপুরে নগরের পেঁয়াজপট্টিতে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ বুধবার ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৪৪ টাকা থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজ বুধবার বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায়।
নগরের পেঁয়াজপট্টির আড়তদার পায়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. এনায়েত হোসেন জানান, বরিশালে পাইকারি বাজারে অন্য জেলা থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। সেখান থেকে যে দরে পেঁয়াজ কেনা হয়, তার ওপর পরিবহন ও শ্রমিকসহ আনুষঙ্গিক খরচ হিসেব করেই বরিশালের বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। কেউ অতিরিক্তি রাখছে না। আর মূল জায়গাতে দাম বাড়লে তাদের কিছু করার থাকে না। সুলতান তালুকদার নামে আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, দাম বাড়ার খবরে বরিশালের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। যার সাথে একমত পোষন করে পেঁয়াজপট্টির শ্রমিকরা বলছেন, যার ১ কেজি পেঁয়াজের প্রয়োজন দাম বাড়ার খবরে তিনি ৫-১০ কেজি পেঁয়াজ কিনছেন। আর কেউ বা ৫০ কেজির বস্তাও নিচ্ছেন। এতে রাতারাতি পাইকারি বাজারে সংকট দেখা দিচ্ছে। ফলে পাইকারি বাজার ঠিক রাখতে ব্যবসায়ীরা আগের থেকে বেশি পেঁয়াজের জন্য ব্যাপারীদের বলছেন। এতে করে মূল পাইকারি বাজারেই পেঁয়াজের সংকটে দাম বেড়ে যাচ্ছে। পেঁয়াজের সংকটের কারণেই দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল পেঁয়াজ আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মোল্লা।
এদিকে পাইকারি বাজারের মতো খুচরো বাজারেও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে এখনো মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার না হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা আগে থেকে সংগ্রহ করা পেঁয়াজ বেশি মূল্যে বিক্রি করছেন। কেজি প্রতি খুচরা বাজারে পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ী সুনাম মিয়া জানান, দাম বাড়ার খবরে ক্রেতারা যে যার মতো করে গত দুই দিনে পেঁয়াজ কিনেছেন। যারা আগে আধা কেজি থেকে ১ কেজি পেঁয়াজ কিনতেন তারা এখন ৩-৫ কেজি করে পেঁয়াজ কিনেছেন।
পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় দোকানের পেঁয়াজ শেষ হওয়ায় পরও নতুন করে পেঁয়াজ সংগ্রহ করেননি বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ী রফিক। তার মতে ভোক্তা পর্যায়ের পেঁয়াজের চাহিদা কমে গেলে পচনশীল এ পণ্যটির দর কমে যাবে। তাই আরো ২/১ দিন না দেখে নতুন করে পেঁয়াজ ওঠাবেন না দোকানে।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টায় নগরের পেঁয়াজপট্টিতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপম মজুমদার অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে কয়েকটি আড়ত পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এ বাজারে যে দরে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে, তার থেকে ৩-৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজার ঘুরে পেঁয়াজ বিক্রিতে অস্বাভাবিক দর রাখার কোন চিত্র দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানের নির্দেশে এ মনিটরিং কার্যক্রম চলমান থাকবে। পাইকারির পাশাপাশি খুচরা বাজারেও মনিটরিং কার্যক্রম চালানো হবে। কেউ বাজারকে অস্থিতীশীল করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি জেলা সদরে দুটি, উপজেলায় একটি এবং মহানগরীতে ৫টি ট্রাকে পেঁয়াজ, চিনি, মুসুর ডাল ও সয়াবিন তেল বিক্রি শুরু করে টিসিবি। যেখানে ৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। তাও আবার জনপ্রতি নির্ধারিত পরিমাণে কিনতে হচ্ছে।
Leave a Reply